স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ
মৌল পরিবর্তন
যতক্ষণ একজন মানুষ নিজেকে এক, অদ্বিতীয়, অবিভাজ্য ভাবার ভুল ধারণায় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমূল পরিবর্তন যে অসম্ভব, তা স্পষ্ট। আসল কথা হলো, আধ্যাত্মিক কাজ শুরু হয় নিজের কঠোর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। এটি আমাদের ভেতরের সেই বহু মানসিক উপাদান, ‘আমি’ বা অবাঞ্ছিত বিষয়গুলোর কথা জানায়, যা জরুরি ভিত্তিতে ছেঁটে ফেলা বা নির্মূল করা দরকার।
নিঃসন্দেহে, অজানা ভুলগুলো দূর করা সম্ভব নয়। যা আমরা আমাদের মন থেকে আলাদা করতে চাই, আগে তা পর্যবেক্ষণ করা দরকার। এই ধরনের কাজ বাইরের নয়, ভেতরের। যারা মনে করে ভদ্রতার ম্যানুয়াল বা বাহ্যিক নৈতিক পদ্ধতি তাদের সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে, তারা ভুল করবে।
চূড়ান্ত সত্য হলো, আত্ম-পর্যবেক্ষণে মনোযোগ দিয়ে গভীর কাজ শুরু হয়। এটাই যথেষ্ট প্রমাণ করে যে, এর জন্য প্রত্যেকের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা দরকার। খোলাখুলিভাবে বললে, আমরা জোর দিয়ে বলছি: এই কাজ অন্য কেউ আমাদের জন্য করতে পারবে না।
আমাদের ভেতরের বিষয়গত উপাদানগুলোর সরাসরি পর্যবেক্ষণ ছাড়া মনের পরিবর্তন সম্ভব নয়। যদি কেউ ভুলের বহুমাত্রিকতাকে মেনে নেয় এবং তা নিয়ে পড়াশোনা বা পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন মনে না করে, তবে তা এড়িয়ে যাওয়া বা আত্ম-প্রতারণার শামিল।
কেবলমাত্র কঠোর আত্ম-পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই আমরা প্রমাণ করতে পারব যে আমরা ‘এক’ নই, ‘বহু’। ‘আমি’-এর বহুবচনকে স্বীকার করা এবং কঠোর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা প্রমাণ করা—এই দুটি ভিন্ন বিষয়।
কেউ হয়তো ‘বহু আমির তত্ত্ব’ মেনে নিতে পারে, কিন্তু কখনও তা প্রমাণ করেনি। এটা কেবল নিজের পর্যবেক্ষণেই সম্ভব। গভীর পর্যবেক্ষণের কাজ এড়িয়ে যাওয়া বা অজুহাত খোঁজা—অবক্ষয়ের লক্ষণ। যতক্ষণ একজন মানুষ নিজেকে একই ব্যক্তি ভাববে, ততক্ষণ তার পরিবর্তন হবে না। আর এই কাজের উদ্দেশ্য হলো ভেতরের জীবনে পরিবর্তন আনা।
আমূল পরিবর্তন একটি সম্ভাবনা, যা সাধারণত নিজের ওপর কাজ না করলে হারিয়ে যায়। মানুষ যতক্ষণ নিজেকে এক ভাববে, ততক্ষণ পরিবর্তনের শুরুটা অজানাই থেকে যাবে। যারা ‘বহু আমির তত্ত্ব’ প্রত্যাখ্যান করে, তারা প্রমাণ করে যে তারা কখনও নিজেদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি।
কোনো অজুহাত ছাড়া কঠোর আত্ম-পর্যবেক্ষণ আমাদের প্রমাণ করতে সাহায্য করে যে আমরা ‘এক’ নই, ‘বহু’। বিভিন্ন ছদ্ম-আধ্যাত্মিক বা গুপ্ত তত্ত্ব সবসময় আত্ম-পর্যবেক্ষণ থেকে পালানোর পথ দেখায়। নিঃসন্দেহে, নিজেকে সবসময় একই ব্যক্তি ভাবা আত্ম-পর্যবেক্ষণে বাধা দেয়।
কেউ হয়তো বলতে পারে, “আমি জানি আমি এক নই, বহু। জ্ঞান (Gnosis) আমাকে শিখিয়েছে।” এই উক্তি আন্তরিক হলেও, যদি এই বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকে, তবে তা কেবল বাহ্যিক ও অগভীর হবে। প্রমাণ করা, অভিজ্ঞতা লাভ করা এবং বোঝা—এইগুলোই জরুরি। তাহলে সচেতনভাবে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
বলা এক জিনিস, আর বোঝা অন্য জিনিস। যখন কেউ বলে, “আমি বুঝি যে আমি এক নই, বহু”, যদি তার বোঝাটা সত্যি হয়, শুধু কথার ফুলঝুরি না হয়, তবে তা ‘বহু আমির তত্ত্ব’-এর প্রমাণ। জ্ঞান ও বোঝা ভিন্ন। প্রথমটি মনের, দ্বিতীয়টি হৃদয়ের।
‘বহু আমির তত্ত্ব’ সম্পর্কে শুধু জ্ঞান থাকলেই চলবে না। দুর্ভাগ্যবশত, এখন জ্ঞান বোঝার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। মানুষ নামক দুর্বল বুদ্ধিজীবী প্রাণীটি জ্ঞানের দিকটিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, সত্তার দিকটি ভুলে গেছে। ‘বহু আমির তত্ত্ব’ জানা এবং বোঝা—সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য জরুরি।
যখন একজন মানুষ নিজেকে ‘এক’ নয়, ‘বহু’ হিসেবে দেখতে শুরু করে, তখন সে ভেতরের প্রকৃতির ওপর সিরিয়াসলি কাজ শুরু করে।